নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৭ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ খুব বেশি মূল্যসংযোজন করতে পারছে না। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমন্বিত উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় পিছিয়ে থাকা অন্যতম কারণ। এছাড়া রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ হচ্ছে না। পাশাপাশি বাংলাদেশ উচ্চ শুল্কহারের কারণে আমদানি ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে। ফলে কোনো রফতানি পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে এর কাঁচামাল আমদানিতে ব্যাপক উৎপাদন খরচ হচ্ছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ট্রান্সফরমিং বাংলাদেশ পার্টিশিপেশন ইন ট্রেড অ্যান্ড গ্লোবাল ভ্যালু চেইন শীর্ষক এক প্রতিবেদন এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
রোববার (৭ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল অনুষ্ঠিত প্রকাশনা অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বক্তব্য দেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। আলোচক ছিলেন- পিআরআইএর নির্বাহী পরিচালক জাঈদী সাত্তার এবং এডিবির রিজিওনাল অ্যাডভাইজার রানা হাসান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন-এডিবির চিফ ইকোনমিস্ট আলবার্ট এফ পার্ক এবং এডিবির সিনিয়র পরিসংখ্যানবিদ মাহিনথান জে মাসিসংঘাম এবং এডিবির অর্থনীতিবিদ পারমিলা এ শ্রীভেলি। বক্তব্য দেন ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ডিরেক্টর আরিফ সোলায়মান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রফতানি আয় পোশাক খাত নির্ভর। মোট রফতানির ৯০ শতাংশ আছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কিন্তু সম্ভাবনা থাকার পরও অন্য শিল্প পণ্যের রফতানি বাড়ছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশকে চামড়া ও চামগড়াজাত পণ্য, ওষুধ এবং জুতা শিল্পসহ বিভিন্ন রফতানি বাড়ানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশ শিল্প খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত, ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক পেছনে।
আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের সূচক ডেটা দেখায় যে, সামগ্রিক লজিস্টিক কর্মক্ষমতা সূচকের ১৫০টি ইকোনমিক অবকাঠামোর মাত্রার মধ্যে বাংলাদেশ ১০০তম স্থানে রয়েছে। যা বাণিজ্য সহজতর করার জন্য অবকাঠামো বৃদ্ধির পরামর্শ দেয়। নতুন উৎপাদন খাত নির্মাণের পাশাপাশি উদীয়মান প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উৎপাদনের সাথে মোকাবিলা করার জন্য মানব পুঁজি গঠনও অপরিহার্য। যদিও বাংলাদেশ অর্থনীতিতে শিক্ষার উন্নতিতে সাফল্য অর্জন করেছে, ডাটাবেস থেকে বেশিরভাগ বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও বাড়ানোর প্রয়োাজনীয়তার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এছাড়া ২০১৭ সালের হিসাবে, মৌলিক শিক্ষার তুলনায় কর্মজীবী জনসংখ্যার ৩৫.৫ শতাংশ এবং অন্য ৩৪.৫ শতাংশ শুধুমাত্র মৌলিক শিক্ষা পেয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রফতানির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছি। এটি শিকার করতে অসুবিধা নেই যে আমাদের শুল্ক অনেক উচ্চ। এটি আলোচনা করে কমাতে হবে। করও কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি, সেটিও আলোচনা করতে হবে। আমাদের কর জিডিপি রেশিও কম, বাজেট ঘাটতি ৬ শতাংশ। এটাকে ৫ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের শুধু ফরেন ফান্ড নয়, প্রযুক্তিগত সহায়তাও নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটের আলোচনা শুধু একমাস নয় আরও বিস্তৃত হতে হবে। শুধু সংসদ নয়, সংসদীয় কমিটি এবং সবার সঙ্গেই আলোচনা করতে হবে। এনবিআরকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। পণ্য এবং বাজার উভই বহুমুখীকরণ করতে হবে।’
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইএমএফ যেকোনো শর্ত দিলেই, আমরা যে মেনে নেব তা কিন্তু নয়। তারা আমাদের সহযোগী। আমাদের নিজের প্রয়োজনেই কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। সুদ হার আপাতত বাড়ানো ঠিক হবে না। আমেরিকা যদিও সুদ হার বড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ধীর যেতে হবে। সেটি একইভাবে কাজ নাও করতে পারে।’
Posted ৮:৩৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ মে ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy