নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
শিল্প উৎপাদন ও ব্যবসা-বানিজ্যে খরচ কমাতে অগ্রিম আয়কর ও আগাম কর রহিত করার আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ বিষয়ে এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৩তম সভায় এ আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন। এফবিসিসিআই সভাপতির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন তার বক্তব্যে চলমান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীল খাতকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি শিল্প ও বিনিয়োগ বান্ধব বাজেট প্রণয়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে এনে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মূদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সকল ধরণের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া জরুরী”।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নে বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্প ও সেবা এবং সিএমএসএমই-কে শুল্ক করের যৌক্তিক প্রতিরক্ষণ; ক্ষেত্র বিশেষে অব্যাহতি বা বন্ড সুবিধা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ভিত্তিতে রপ্তানি বৈচিত্রকরণ, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ; নিত্য ব্যবহার্য্য পণ্যমূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা; করনীতি, কর পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কর নেট বা কর জাল সম্প্রসারণ; স্বেচ্ছায় কর প্রতিপালন হার বৃদ্ধিপূর্বক রাজস্ব আদায় তথা কর জিডিপি’র অনুপাত বৃদ্ধি;আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কারিগরী ও কর্মমুখী শিক্ষা এবং শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি বিষয়গুলির ওপর বিশেষ নজর রাখার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
রাজস্ব আহরণ এবং রাজস্ব পলিসি কার্যক্রম পৃথক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ গঠন, মুদ্রা পাচারে সহায়ক ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা পরিপন্থী বিদ্যমান ট্যারিফ মূল্য ও মিনিমাম ভ্যালু সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপণ রহিত করে তদস্থলে বিনিময় মূল্য (Transaction Value) সিস্টেম চালু; প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকদেরকে প্রদত্ত বন্ড সুবিধার বাহিরে অন্যান্য রপ্তানিকারকদের জন্য কেন্দ্রীয় বন্ড ব্যবস্থা (Central Bond) প্রবর্তন করা; জমি ক্রয়, নির্মাণ এবং শিল্প ও সেবা খাতের ইউটিলিটি বিলসহ সকল উৎপাদনশীল খাতে প্রদেয় যাবতীয় প্রশাসনিক সেবা সম্পূর্ণরূপে পরোক্ষ করমুক্ত রাখার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
আমদানী শুল্কের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি, তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পন্য, মৌলিক এবং দেশে উৎপাদিত হয়না এমন কাঁচামাল-এর শুল্ক হার ১% থেকে ৩% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা; আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে তালিকাভুক্ত পন্য বা সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (Regulatory Duty) আরোপ করা; জ্বালানী সাশ্রয় ও পরিবেশ বান্ধব গাড়ী Electric ও Hybrid গাড়ীর শুল্ক হার হ্রাস করার আহ্বান জানান মো: জসিম উদ্দিন।
এছাড়াও মূসকের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যন্ত ভ্যাট অফিসের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে সক্ষম ভ্যাট প্রদানকারীদের ভ্যাট নেটের আওতায় আনা, আমদানিকৃত উপকরণের ক্ষেত্রে ৩ (তিন) শতাংশ আগাম কর ধাপে ধাপে রহিত করা, নিম্ন আয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যবহার্য্য পণ্য, সাধারন পণ্য পরিবহন, নিত্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবা, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্পের কাঁচামাল/উপকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রি-সাইক্লিং, টেন্ডার বহির্ভুত সরাসরি পণ্য মেরামত বা সার্ভিসিং খাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেয়া, করদাতাদের ব্যবসা পরিচালনা ও মূসক কর্তৃপক্ষেরও করদাতাদের তদারকি সহজ করতে ভ্যাট নিবন্ধন, রিটার্ণ দাখিল, রিফান্ড, অডিট সহ সকল কার্যক্রম করার ক্ষেত্রে অটোমেশন নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
আয়করের ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,০০,০০০ টাকা এবং মহিলা ও সিনিয়র নাগরিকদের জন্য ৪,৫০,০০০ টাকা করা, এসএমই শিল্পের বিকাশ ত্বরান্নিত করার জন্য প্রিন্টিং শিল্প, প্যাকেজিং ও বাইন্ডিং এর সরবরাহকারীদের উৎসে আয়কর এর আওতা বহির্ভূত করা, সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় তালিকাভূক্ত ভোগ্য পণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতা বর্হিভুত রাখার প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীরা খুশী হবেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন,“এবারের বাজেট নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আপনারা ঠকবেন না।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য অর্থমন্ত্রী বলেন,“সারাবিশ্বে আজ অর্থনীতির মন্দা অবস্থাা বিরাজমান। তার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এ দেশের বেসরকারি খাত। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১ থেকে ৩৫তম স্থানে এসেছে। এর অংশীদার সবাই। উন্নয়নশীল দেশ ভারত, মালয়েশিয়ার কাতারে আজ আমরাও। সবাইকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আজ প্রশংসা করছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, এবারের বাজেটে সবাই খুশী হবে। উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গ্রহনের আহ্বান জানান তিনি।
অনষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এফবিসিসিআইর সহসভাপতি এম এ মোমেন। তিনি তার বক্তব্যে বর্তমান চ্যালেঞ্জিং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে স্থানীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরো সূদৃঢ় করতে আগামি বাজেটে যথাযথ দিক নির্দেশনা থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, মীর নাসির হোসেন, প্রাক্তন প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, বর্তমান সহসভাপতি মোঃ আমিন হেলালী, মোঃ হাবীব উল্লাহ ডন, সালাউদ্দিন আলমগীর, এম এ রাজ্জাক খান রাজ, পরিচালকবৃন্দসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
Posted ৬:১২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy