নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১০ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ, টমেটো ও রুই-কাতলা জাতীয় মাছের আমদানি বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ কমে গেছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ১ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে ২৩০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ, ১ হাজার ৬৫৬ টন টমেটো ও ১ হাজার ২৬ মেট্রিক টন সাদা মাছ আমদানি হয়েছে। প্রতিদিনই এই তিনটি পণ্য আমদানির তালিকায় থাকছে।
এদিকে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি অব্যাহত থাকায় যশোরের খুচরা বাজারে এ পণ্যের দামও কিছুটা কমতে শুরু করেছে। শহরের বড় বাজারগুলোতে গতকাল শুক্রবার খুচরায় প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। অথচ ১৫ দিন আগেও প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ২০০ টাকার বেশি। বছরের এই সময়ে আবহাওয়ার কারণে দেশে কাঁচা মরিচ ও টমেটোর উৎপাদন কমে যায়। তাতে বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ কমে দামও বাড়তে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বছরের এই সময়ে কাঁচা মরিচ ও টমেটোর আবাদ ও উৎপাদন কমে যায়। তাই আমদানি করে এসব পণ্যের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করা হয়।’
যশোর জেলায় এ বছর ১৩২ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ ও প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে অনেক এলাকার কাঁচা মরিচের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টমেটো মূলত শীতকালীন ফসল। গ্রীষ্মকালীন টমেটোর যতটুকু আবাদ হয়েছে, তাতেও এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি। ফলে আমদানি করা টমেটো দিয়েই বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের ব্যবস্থাপক ও শুল্ক কর্মকর্তাদের পচনশীল পণ্য বেশি পাঠানোর তাগিদ দেওয়া হলেও সাধারণ পণ্যের আনুপাতিক হারে পচনশীল পণ্য পাঠাতে আগ্রহী তাঁরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, পচনশীল পণ্য বেশি পাঠানোর জন্য ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের ব্যবস্থাপক ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের অংশীজনদের এক বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তাঁরা সাধারণ পণ্যের আনুপাতিক হারে পচনশীল পণ্য পাঠাতে বেশি আগ্রহী।
তিন দিন পর বাণিজ্য শুরু
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ৫ আগস্ট বিকেল থেকে ৮ আগস্ট সকাল পর্যন্ত তিন দিন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার আবার দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শুরু হয়।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ৩০৪ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ১৬৪ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল তৈরি পোশাক, পাটের সুতা, কাঁচা পাট, খালি সিলিন্ডার, জুতা, আরেকা বাদাম ও ভ্রমণসামগ্রীর লাগেজ। আর আমদানি পণ্যের মধ্যে ২২৯ ট্রাক সাধারণ পণ্য ও ৭৫ ট্রাক পচনশীল পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে টমেটো, কাঁচা মরিচ, মাছ, তরল গ্যাসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেট্রাপোল বন্দরের ব্যবস্থাপকসহ সে দেশের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলে আমরা আশ্বস্ত করেছি। কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না—এমন প্রতিশ্রুতির পর তাঁরা আমাদের ওপর আস্থা রাখায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে।’
এদিকে দুই দেশের মধ্যে আবার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিন পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে। এক সপ্তাহ আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলে দেশে কী প্রভাব পড়ে, তা আমরা করোনার সময় টের পেয়েছিলাম। এখন অবশ্য সেই পরিস্থিতি নেই।’
আমদানি-রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ কমেছে
স্বাভাবিক সময়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যবোঝাই এক হাজারের বেশি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন মাত্র ২৩০ ট্রাক পণ্য সীমান্তের ওপারে পেট্রাপোলে দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রপ্তানি পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে অপেক্ষমাণ রয়েছে মাত্র ৫০টি ট্রাক। স্বাভাবিক সময়ে থাকে ১৫০ থেকে ২০০টি।
এ বিষয়ে বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘গত বুধবার পেট্রাপোলে এক হাজারের বেশি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ দেখে ভারতের ব্যবসায়ীদের একটি অংশ পেট্রাপোল বন্দরে কিছু ট্রাকের পণ্য নামিয়ে রাখে। নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা ভেবে ভারতীয় অনেক ব্যবসায়ী ট্রাক বাংলাদেশে পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাঁরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আমদানি পণ্যের পরিমাণ বাড়বে।
বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমোদন রয়েছে দুই দেশের সরকারের। এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ ট্রাক আমদানি ও ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়।
Posted ৩:০৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১০ আগস্ট ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy