নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪ | প্রিন্ট
সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিমের বিরোধিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে আন্দোলন করছেন তাতে কোনো যৌক্তিকতা দেখছেন না অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যয়’ স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনের কোনো যুক্তি নেই।
মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর অফিস কক্ষে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াংমিং ইয়ং এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতার মূল্যায়ন করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যাশার চেয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বেশি সহায়তা করছে।’
প্রত্যয় স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন নিয়ে গত রবিবার বিকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি (সর্বজনীন পেনশন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়। এটি অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত এবং সরকারের সার্বিক পলিসির ডিসিশনের একটি অংশ। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং এই সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করা আপাতত সম্ভব নয়।’
এসময় শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়া নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কিছু বলছি না। তারা একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই দেশ গণতান্ত্রিক দেশ, সেখানে সবারই রাজনৈতিক ও বাক-স্বাধীনতার অধিকার আছে। এই অচলাবস্থা যদি আগামীকাল (সোমবার) থেকে শুরু হয়ে থাকে তাহলে আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবস্থা নেব। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই পরবর্তী সিদ্ধান্তে আমরা যাব।’
তবে শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন শিক্ষকনেতারা। গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দুই নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, ‘বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কি না সেটা আমাদের জানা নেই। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। আমরা স্টকহোল্ডার, অথচ আমাদের সঙ্গেও আলোচনা করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেনি। শিক্ষামন্ত্রীর কথায় এটা স্পষ্ট যে, অর্থ মন্ত্রণালয়— শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা না করেই এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে দুইবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিন মাস ধরে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু আমাদের কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি বা আলোচনা হয়নি। আমরা স্টকহোল্ডার, আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনোভাবেই উচিত না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছাড়া, মতামত ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় কীভাবে এটি করতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকনেতারা।
এদিকে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের মাঝে প্রত্যয় স্কিম নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সমাজের সব স্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার লক্ষ্যে অন্যদের পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রবর্তন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, কোনো পেনশন পান না। তাছাড়া সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ একটি সুগঠিত পেনশনের আওতাবহির্ভূত থাকায় সরকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে একটি সুগঠিত পেনশন কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রবর্তন করেছে।
Posted ৪:১৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy