নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
খানাপ্রতি (পরিবার) পানি-স্যানিটেশনে ব্যয় ১১ হাজার ৫৭৪ টাকা, যা খানা বার্ষিক আয়ের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। রোববার (২৯ অক্টোবর) নগরীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস ২০২৩ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি বা হাইজিন এই তিনটির সমন্বয়ে হচ্ছে ওয়াশ। একজন মানুষকে সুস্থ থাকতে দিন দিন এ খরচ বাড়ছেই। ২০২০ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তৈরি করা ওয়াস প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বছরে একজন মানুষের পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনে খরচ হচ্ছে ৩৪৯১ টাকা। এবং গড়ে একটি পরিবারের খরচ হচ্ছে ১১ হাজার ৫৭৪ টাকা। যা ওই পরিবারের মোট আয়ের ৪.৩ শতাংশ। এবং বছরে জিডিপির ২.১৮ শতাংশ এ ওয়াশে খরচ হচ্ছে।
ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টসের প্রকাশনায় দেখা যায়, একজন মানুষের বছরে স্বাস্থ্য বিধি বা হাইজিনে খরচ হয় ২০৯৩ টাকা, পানির পেছনে খরচ হয় ৫০০ টাকা এবং স্যানিটেশনে খরচ হয় ৮৯৮ টাকা। যা খুবই বেশি। মোট ওয়াশ খরচের প্রায় ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্যবিধিতে ও ২৬ শতাংশ স্যানিটেশনে ব্যয় হয়। মোট ওয়াশ খরচের ১৪ শতাংশ ব্যয় হয় পানীয় জলের জন্য।
প্রকাশনায় দেখা যায়, বছরে গড়ে প্রতিটি পরিবারের পানি বাবদ ১ হাজার ৫০২ টাকা, স্যানিটেশন বাবদ ১ হাজার ৯৮৫ টাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি বাবদ ৮ হাজার ৮৭ টাকা খরচ করে। পরিবার প্রতি ওয়াশ বাবদ গড় খরচ ১১ হাজার ৫৭৪ টাকা যা তাদের বার্ষিক পরিবারিক আয়ের ৪.৩ শতাংশ। আয়ের পরিমাণ অনুসারে পারিবারিক ওয়াশ ব্যয়ের বিভাজন থেকে দেখা যায়, শহরাঞ্চল ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই দরিদ্র এবং দরিদ্রতম আয়ের পরিবারগুলো তাদের আয়ের বড় অংশ ওয়াশে ব্যয় করে।
বাংলাদেশের ২.৪ শতাংশ জনসংখ্যা নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা বঞ্চিত। জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ খাবার পানি সংগ্রহের জন্য নলকূপ ব্যবহার করে। আনুমানিক ১০ শতাংশ জনসংখ্যার ট্যাপ বা পাইপযুক্ত পানীয় জলের সুবিধা রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শহরে বসবাস করেন। শহরে বসবাসকারীদের বেশিরভাগই বড় নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানির উপর নির্ভর করে। ২০২০ সালে শহর এলাকায় বসবাসকারীদের ওয়াশের ব্যয় ছিল ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। একই সময়ে, গ্রামীণ জনসংখ্যা এ খাতে ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যেখানে ব্যয়ের ৭৯ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে হস্ত বা মোটরচালিত পাম্প দিয়ে পানি তোলার জন্য।
এদিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯৯ শতাংশ ফ্ল্যাশ/ পউর ফ্লাশ বা পিট ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। পিট ল্যাট্রিন ব্যবহারকারী এবং ফ্ল্যাশ/পউর ফ্লাশ ব্যবহারকারীর হার প্রায় একই, যা যথাক্রমে ৪৮ শতাংশ এবং ৫১ শতাংশ। ২০২০ সালে মোট ওয়াশ ব্যয়ের আনুমানিক ২৬ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা স্যানিটেশন পরিষেবায় ব্যয় করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা গ্রামীণ এলাকায় এবং ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা শহর এলাকায় ব্যয় করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি ব্যয়
হাত ধোয়া এবং মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ব্যয় মোট স্বাস্থ্যবিধি ব্যয়ের ৯৬ শতাংশ। ২০২০ সালে পরিচ্ছন্নতা পরিষেবার জন্য ব্যয় ছিল ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা, এরপর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির জন্য ১৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা খানাসমূহ সাবান এবং ডিটারজেন্ট সংগ্রহের জন্য মূলত ব্যয় করেছে।
বিভাগীয় পর্যায়ে ওয়াশ ব্যয়ের পর্যালোচনায় দেখা যায় ২০২০ সালে ওয়াশ খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে ঢাকা বিভাগে (২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা), এরপরে চট্টগ্রামে (১৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা)। মোট ওয়াশ ব্যয়ের ১২ শতাংশ রাজশাহী বিভাগ ব্যয় করে থাকে। খুলনা, ময়মনসিংহ এবং রংপুরের ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় একই মাত্রার যা কিনা মোট ওয়াশ ব্যায়ের ৭.৪ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে। ওয়াশ ব্যয়ের সর্বনিম্ন অংশ সিলেট এবং বরিশাল বিভাগে পরিলক্ষিত হয়, যথাক্রমে ৪.৬ শতাংশ এবং ৩.১ শতাংশ।
২০২০ সালে বাংলাদেশের জন্য মাথাপিছু ওয়াশ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৪৯১টাকা, যেখানে ঢাকার জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে জনপ্রতি ৪ হাজার ২৯৫ টাকা এরপরে চট্টগ্রাম ৩ হাজার ৯৯১ টাকা।
জানা গেছে, ২০২০ সালে মোট ওয়াশ ব্যয়ের প্রায় ১৬ শতাংশ কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক বা স্থানীয় সরকারের তহবিল দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছে। সরকারের মোট ৯ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার মধ্যে, কেন্দ্ৰীয় সরকার ৮ হাজার ৩০ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা যোগান দেয়। ২০২০ সালে, ওয়াশ-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সংস্থাগুলোর সরাসরি ব্যয় ছিল ১৩০ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস হলো একটি স্বীকৃত পদ্ধতি, যা জাতীয় পর্যায়ে পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যাবিধি (ওয়াশ) সম্পর্কিত সরকারি এবং বেসরকারি ব্যয় ট্র্যাকিং করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য হলো, ওয়াশ পরিষেবাগুলোতে করা বিনিয়োগ ও খরচের একটি বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরা এবং এসব পরিষেবা উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এ তথ্যগুলো ব্যবহার করা। এর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য সরকার এবং অন্যান্য অংশীজনদের বিনিয়োগের ব্যবধান চিহ্নিতকরণ, অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যয়খাত নির্ধারণ এবং টেকসই ওয়াশ পরিষেবা নিশ্চিত করতে কার্যকরভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে সম্পদ বরাদ্দ নিশ্চিতে সহায়তা করতে পারে।
Posted ৮:২৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy