নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে ডলার কেনা বেচার কারণে সাত মানি চেঞ্জার এর লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি দশটি মানি চেঞ্জারের ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে লাইসেন্সের শর্ত ভেঙে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য নিয়মিত বাংলাদেশ ব্যাংকে না পাঠানো, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন মানি চেঞ্জার মনিটরিং সিস্টেমে ভুল তথ্য প্রদান এবং মানি চেঞ্জার এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ বরাবর ইসুকৃত নির্দেশনা লঙ্ঘন করে নির্ধারিত হাড়ের চেয়ে বেশি মূল্যে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়।
যে সাতটি মানিচেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ইয়র্ক মানি এক্সচেঞ্জ, জামান মানি চেঞ্জিং হাউজ, জেনি মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, মার্সি মানি এক্সচেঞ্জ কো: লিমিটেড, বেঙ্গল মানি এক্সচেঞ্জ ও জেবি মানি এক্সচেঞ্জার লিমিটেড।
অন্যদিকে যে ১০টি মানি চেঞ্জারের ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, নিউ প্রাইম মানি চেঞ্জার লিমিটেড, উত্তরা মানি চেঞ্জার, মিসা মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, যমুনা মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, পাইওনিয়ার মানি এক্সচেঞ্জ, বুড়িগঙ্গা মানি এক্সচেঞ্জ প্রা: লিমিটেড, স্কাফ মানিচেঞ্জার, হযরত খাজা বাবা মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র লিঃ, গ্লোরী মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ও মাতৃক মানি চেঞ্জার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানায়, ডলারের সরবরাহ সংকটে কিছু ব্যাংক সীমার অতিরিক্ত মুদ্রা জমিয়ে রেখে অতিরিক্ত মুনাফা শুরু করে। সুযোগ থাকলেও তা বাজারে না ছেড়ে কৃত্রিমভাবে দর বাড়ানো হয়। আবার কয়েকটি ব্যাংক ডলার সংরক্ষণের তথ্যও গোপন করে।
এর আগে ২০২২ সালের আগস্টে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংক ছিল।
পরবর্তীতে ডলারের বাজার অস্থিতিশীল করে অতিরিক্ত মুনাফা করার অভিযোগে সরিয়ে দেওয়া ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে আগের পদে ফেরার সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে আবারও এসব ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনেকে ডলার কারসাজিতে জড়িয়ে পড়েছে।
গত সপ্তাহ থেকে খোলাবাজারে ডলারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বর্তমানে আন্তঃব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের ব্যবধান প্রায় আট টাকা। এই বড় ব্যবধানের কারণে হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যাদের মাসিক আয় কম এবং যারা অবৈধভাবে প্রবাসে আছেন, তারা হুন্ডিতেই টাকা পাঠাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এতে করে কমে যাচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্স। গত দেড় বছরে রেকর্ডসংখ্যক কর্মী বিদেশে গেলেও প্রবাসী আয়ের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডির ব্যবহার বেড়ে গেছে।
ব্যাংকগুলো যে দরে নগদ ডলার বিক্রি করবে, সেটির সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ টাকা যোগ করে ডলার বিক্রি করতে পারবে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো। গতকাল সোনালী ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায়। এর সঙ্গে আড়াই টাকা যোগ করে ক্রেতাদের থেকে মানিচেঞ্জাররা সর্বোচ্চ নিতে পারবে ১১১ টাকা ৫০ পয়সা। আর মানিচেঞ্জাররারা এই রেটেই ডলার বিক্রি করছে বলে নিজস্ব সাইনবোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য পাঠিয়েছে। কিন্তু গতকাল কয়েকটি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই রেটে তারা ডলার বিক্রি করছেন না। গতকাল বেশিরভাগ মানিচেঞ্জারে প্রতি ডলার বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ টাকায়। মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত জুলাই ও চলতি আগস্টে ডলার কেনার ব্যাপক চাহিদা। এ সময়ে অনেকে বিদেশ ভ্রমণে যান। আবার শিক্ষার উদ্দেশে অনেকে বিদেশে গেছেন। ফলে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সরবরাহ সেভাবে বাড়েনি।
Posted ৭:৪৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy