নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
করোনার সময় দরিদ্র বাড়লেও পরবর্তী সময় তা কমতে শুরু করে। তবে করোনার কারণে ঢাকায় নতুন দারিদ্র্যের আবির্ভাব ঘটেছে। গত বছর ঢাকা শহরের মোট দরিদ্র মানুষের ৫১ শতাংশই ছিল নতুন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (১৭ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক ২০২৩ সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অধিবেশনে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার। গবেষণার নাম ‘আরবান প্রভার্টি ডায়নামিক ডিউরিং কোভিড-১৯: অ্যানাটমিক অব রেজিলিয়েন্স।’
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। আর হতদরিদ্রের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং হতদরিদ্র ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দরিদ্র মানুষ কমেছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। একই সময় অতিদরিদ্র মানুষ কমেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। ঢাকায় দরিদ্র মানুষ কমার অন্যতম কারণ হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘করোনার সময় দারিদ্র্য বাড়লেও এটা ছিল সাময়িক। যা পরবর্তীকালে কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে স্বাভাবিকের জায়গায় চলে আসে। এ দরিদ্র কমার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেলফ ইমপ্লয়মেন্ট, স্থানান্তর, ফিন্যান্সিয়াল সেভিংস, অর্থাৎ সঞ্চয় ভেঙে খাওয়া এবং ডিজিটাল ইকোনমি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, করোনার শুরুর দিকে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ ছিল। তবে ২০২২ সালের শুরুতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ঢাকা শহরের কমে আসে দারিদ্র্য। ২০১৯ এবং ২০২২-এর মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে চরম দরিদ্র পরিবারের অনুপাতও ৩ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট কমে গেছে।
গবেষণায় বলা হয়, ২০২২ সালে মোট শহরে দরিদ্রদের মধ্যে (যাদের সামগ্রিক ঘটনা হ্রাস পাচ্ছে), ৫১ শতাংশ নতুন। দুই হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে বিআইডিএস এই গবেষণা চালায়। এতে উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর তা বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অপরদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর তা বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়।
এছাড়া ২০১৯ সালে দরিদ্র খানা বা পরিবারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করতো। করোনার পর অর্থাৎ ২০২২ সালে এটা বেড়ে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ হয়েছে। যদিও তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। করোনার আগে ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবারের ব্যাংক হিসাব ছিল। পরে বেড়ে হয়েছে ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
অন্যদিকে অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে এমএফএস ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। ২০১৯ সালে এসব পরিবারের মধ্যে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করতো। করোনার পর তা বেড়ে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়েছে। এই ধরনের অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার প্রবণতা বাড়েনি।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সম্পদ যখন সৃষ্টি হয়, তখন বৈষম্য অবধারিত। কারণ, কেউ মেধার গুণে বা যোগ্যতার ভিত্তিতে বেশি সম্পদ সৃষ্টি করে। আমরা বৈষম্য প্রশমনে কাজ করছি। সমতাভিত্তিক সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে বৈষম্য কমানো সম্ভব। আমরা সেটিই করার চেষ্টা করছি। এরই অংশ হিসেবে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার মতো ভাতা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা কাজ না করেও ভাতা পাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আগে মানুষ এত ছিল যে তখন বৈষম্য নিয়ে চিন্তা ছিল না। এখন সবাই খেতে পারে। এ কারণে বৈষম্য নিয়ে কথা আসছে। আমরা সম্পদ সৃষ্টি করতে চাই। ভাত, মাছ, মাংস, ডিমের মতো সম্পদ গড়তে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।’
ড. শামসুল আলম বলেন, ‘করোনার সময় দরিদ্র বেড়েছিল। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা এবং উদ্যোগে দরিদ্র নিয়ন্ত্রণ বা কমানো সম্ভব হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, করোনার সময়ে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানা বন্ধ না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতির প্রভাব পড়েনি।
Posted ১:৫৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy