বুধবার ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিরু ও তার স্ত্রীকে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট

হিরু ও তার স্ত্রীকে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির প্রমাণ মেলায় আলোচিত বিনিয়োগকারী সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক মো. আবুল খায়ের হিরু ও স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান এবং তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যোগসাজশের মাধ্যমে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে হিরু, তার স্ত্রী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান একাধিক বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খুলে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নেয়।

চক্রটির দৌরাত্ম্যে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১১৪ টাকা ১০ পয়সা হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ৫৪ টাকা ১০ পয়সা বা ৯০ দশমিক ১৭ শতাংশ।

শেয়ারবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছিল হিরু ও তার সহযোগীরা। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায়ে আনলো বিএসইসি।

বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির দায়ে সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এর ক্ষমতাবলে মো. আবুল খায়েরকে ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এদিকে সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) ও সেকশন ১৭(ই)(৫) এর ক্ষমতাবলে ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২), সেকশন ১৭(ই)(৩) ও সেকশন ১৭(ই)(৫) এর ক্ষমতাবলে আবুল খায়ের স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে অভিযুক্তদের মোট ১৯ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।

এর আগে ডজনখানেক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার দায়ে হিরু ও তার সহযোগীদের একাধিকবার বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে বিএসইসি। ৩১তম বিসিএসের (সমবায়) কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরু ১০ বছর আগেও বিনিয়োগকারীদের কাছে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু পাঁচ বছর আগে আলাদিনের চেরাগ হয়ে হাজির হন শেয়ারবাজারের আলোচিত ও সমালোচিত বিনিয়োগকারী হিরু ও তার সহযোগীরা।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, আবুল খায়ের হিরু স্বল্প সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের বিপুলসংখ্যক শেয়ার সিরিজ লেনদেন করে। এর ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যায়, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। এই আইন ইচ্ছেকৃতভাবে লঙ্ঘনের ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

এদিকে ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও কাজী সাদিয়া হাসানের বিও হিসাবের মধ্যে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের বিপুলসংখ্যক শেয়ার সিরিজ লেনদেন করে। এর ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যায়, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

আর ডিআইটি কো-অপারেটিভ স্বল্প সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার সিরিজ লেনদেন করে, যার ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যায়, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রতিষ্ঠানটি একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে।

এছাড়া কাজী সাদিয়া হাসান ও ডিআইটি কো-অপারেটিভের বিও হিসাবের মধ্যে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের বিপুলসংখ্যক শেয়ার সিরিজ লেনদেন করে। এর ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যায়, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

কাজী সাদিয়া হাসান তার দুটি বিও হিসাব থেকে শেয়ার লেনদেনের ফলে বেনিফিশিয়ারি ওনার্সশিপের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৩) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

কাজী সাদিয়া হাসান স্বল্প সময়ে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার সিরিজ লেনদেন করে, যার ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যায়, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।

শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের বক্তব্য, তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং এ কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন- বলে বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:০৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com