নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২৬ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, সরকারি পর্যায়ে নীতি সহায়তা নিয়ে সমন্বয়হীনতার কারণে শিল্প খাতের বিকাশ থমকে যায়, যেটি কোনভাবেই কাম্য নয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “বাংলাদেশের আমদানি বিকল্প শিল্প: প্রেক্ষিত হালকা প্রকৌশল খাত” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা ।
এম এ মান্নান বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, চীন ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে এবং বাংলাদেশেও সঠিক পথেই রয়েছে, প্রয়োজন যথাযথ নীতি সহায়তা এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন। এ ব্যাপারের সরকারের পক্ষ হতে সকল সহযোগিতা প্রদান করা হবে এবং আশা প্রকাশ করেন দেশের বেসরকারি খাত বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে সফল হবে। তিনি উল্লেখ করেন, মৌলিক মেশিনারিজ উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। তিনি বলেন, ধোলাইখাল, জিঞ্জিরাসহ তৃণমূলের উদ্যোক্তাদের উৎসাহ বৃদ্ধিতে আরও বেশি হারে নজর দিতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, হালকা প্রকৌশল শিল্পের বিকাশে সহায়ক নীতি সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হলে আমাদের স্থানীয় খাদ্য, চামড়া ও পাদুকা, ইলেকট্রনিক্স, এগ্রো-প্রসেসিং এবং ঔষধ শিল্পের বেকওয়ার্ক লিংকেজ খাত হিসেবে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে সক্ষম হবে, পাশাপাশি এ খাত থেকে রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ সম্ভব। তিনি বলেন, এ খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সরকার ‘শিল্পনীতি ২০২২’-তে খাতটিকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তবে এখন প্রয়োজন আর্থিক ও নীতি সহায়তা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, খাতটি এখনও আমদানিনির্ভর এবং আমাদের শিল্প খাতের বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের জন্য একহাতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই এর প্রতি আরও বেশি হারে আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। সচিব আরও বলেন, ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ডেভেলপমেন্ট পলিসি ২০২২’-এ ২০২২-২৭ সালের জন্য একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে, যেটি এ খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে উদ্যোক্তাদের আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা প্রয়োজন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল সেক্টরের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সরকার কাজ করছে। শিল্প সচিব বলেন, অটোমোবাইল খাতের রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপনে ইতোমধ্যে জাপানের সাথে আলোচনা হয়েছে এবং আশা করেন এ ব্যাপারে প্রযুক্তি ও অবকাঠামো সহায়তা পাওয়া যাবে।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শোয়েব হোসেন নোবেল সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশের হালকা প্রকৌশল খাত হতে বার্ষিক আয় বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, জিডিপিতে যার অবদান ৩% এবং প্রতিবছর এ খাতটি ১০% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ খাতে প্রায় ১.৬ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৫০% আমরা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি বলে, তিনি জানান। শোয়েব আরও বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে হালকা প্রকৌশল খাত হতে রফতানির পরিমাণ ছিল ৭৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এখাতের বৈশ্বিক বাজারের পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখাতের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা প্রদান, বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়নে নীতি সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা একান্ত আবশ্যক প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক্স খাতের সহায়ক নীতি সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আগামী বছরই ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি সম্ভব তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফেকচার্স অ্যাসোসিয়েশন ও আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন, ফেয়ার গ্রুপের প্রধান মার্কেটিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেছবাহ উদ্দিন, মেঘনা গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ তানভীর, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরশাদ হক এ খাতের প্রযুক্তিগত গবেষণার জন্য ল্যাব স্থাপনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মুক্ত আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি মাতিউর রহমান বলেন, এ খাতের আমদানি শুল্ক হ্রাস, দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
Posted ১:১৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৬ আগস্ট ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy