নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন বাণিজ্য বাধা কমানো গেলে রপ্তানির পরিমাণ ৩০০ শতাংশ বাড়তে পারে। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি’র) এর এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি ছিল মাত্র ১.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়েছে, এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বাণিজ্য বাধা কমিয়ে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ৩০০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব, যদি এটি মোট ভারতীয় আমদানির মাত্র এক শতাংশও হয়। বিশ্ব ব্যাংকের মতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি বর্তমান মাত্রা থেকে ১৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে যদি বাংলাদেশ ও ভারত একটি মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়ন করে। দুই দেশের মধ্যে পরিবহন সংযোগ উন্নত করলে রপ্তানি আরও বাড়বে, সেক্ষেত্রে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২৯৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্য ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে উল্লেখযোগ্য মুনাফার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য এখন সেই বাণিজ্য সম্ভাবনার মাত্র এক-পঞ্চমাংশে দাঁড়িয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে ‘বিবিআইএন’ দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালের বিদ্যুতের বাজার-আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন মূলধন খরচ সাশ্রয় করবে। পরিবহন ও লজিস্টিক্সের উন্নতির মাধ্যমে ‘ওইএসিডি’দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় কনটেইনার চলাচলের জন্য ৫০ শতাংশ বেশি খরচ কমাতে পারে।
সার্ক দেশগুলো ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি( সাপটা ) স্বাক্ষর করেছিল যা সার্ক অঞ্চলের মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রচারের লক্ষ্যে ডিসেম্বর ১৯৯৫ সালে কার্যকর হয়েছিল। সাপটা ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। এটি ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ায় তিনটি দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি-এফটিএ রয়েছে, যেগুলো হলো ভারত-শ্রীলঙ্কা, ভারত-ভুটান এবং পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল চুক্তিটি ২০১৫ সালের জুনে স্বাক্ষরিত হয়েছে, এটি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আরেকটি উদ্যোগ। আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং পরিবহনে বিবিআইএন দেশগুলির মধ্যে গভীর সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান সংযোগ চুক্তির দ্বারা প্রতিফলিত হয়। যাহোক, আঞ্চলিক বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির সুযোগ অনেকাংশে অব্যবহৃত রয়ে গেছে।
এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও, দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য, বাণিজ্য সহযোগিতার প্রকৃত সম্ভাবনার চেয়ে অনেক নিচে রয়েছে গেছে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য আনুমানিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা সম্ভাব্য ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন জলারের বাণিজ্য প্রবাহের মাত্র ৫ শতাংশ। যদিও অন্যান্য অঞ্চলে বাণিজ্যের অনুপাত পূর্ব এশিয়ায় ৫০ শতাংশ, আসিয়ান ২৬ শতাংশ, ইইউ ৬৭ শতাংশ, নাফটা ৬২ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়া ২ বিলিয়ন জনগোষ্ঠী ছাড়িয়ে যাওয়া অঞ্চল এবং একটি শক্তিশালী ৪.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতি। ভারত দৃঢ়ভাবে ১.৪ বিলিয়ন জনগোষ্ঠী এবং ৩.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিসহ ২১ শতকের বিকাশমান অর্থনীতির মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে, ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি দেশ হবে। আঞ্চলিক বাণিজ্য ও লজিস্টিক নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে এবং দক্ষিণ এশিয়ার একটি ট্রানজিট দেশ হিসেবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ এবং অন্য দেশগুলো তাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় দূরবর্তী অর্থনীতির সঙ্গে বাণিজ্য বেশি করে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ব ব্যাংকের কানেক্টিং টু থ্রাইভ রিপোর্টে দেখা গেছে যে বাংলাদেশের একটি কোম্পানির জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় জার্মানির একটি কোম্পানির সঙ্গে বাণিজ্য করা কম ব্যয়বহুল।
একটি সুপ্রতিষ্ঠিত পরিবহন নেটওয়ার্ক বাণিজ্য সংযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও একীকরণকে উন্নীত করতে পারে। এছাড়া, ভালোভাবে স্থাপন করা পরিবহন সংযোগ পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
Posted ১২:১২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy