নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২১ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে সরকারের পক্ষে ঠিকমত গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। তাই গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিতে উদ্যোক্তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে শিল্প-কারখানা স্থাপন ও স্থানান্তরে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
শনিবার (২০ মে) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানি নিরাপত্তা; ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা’ বিষয়ক স্টেকহোল্ডার ডায়ালগ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন)।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে সরকার সব শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সংযোগ অব্যাহত রাখতে ইতোমধ্যে পরিকল্পনা করছে এবং কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বা হ্রাস করা হবে। এ খাতে সরকার ভর্তুকি হ্রাসের পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে একটি ‘মূল্য নীতিমালা’ প্রণয়ন করেছে।
তিনি আরও বলেন, গ্যাস অনুসন্ধানের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রচুর সময় ও বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগের প্রয়োজন হলেও অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কোনও বিকল্প নেই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে এবং এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার বলেন, অস্থিতিশীল বৈশ্বিক ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সময়কালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে জ্বালানি নিরাপত্তা অন্যতম পূর্বশর্ত।
তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রাথমিক জ্বালানি উৎসে আমাদের আরও বেশি বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এগুলোর সংস্কার একান্ত অপরিহার্য। দেশের বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নে একটি পূর্ব অনুমানযোগ্য জ্বালানির মূল্য নীতিমালা একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। সেই সাথে ভবিষ্যতে জ্বালানি চাহিদা এবং সরবরাহের ভিত্তিতে ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান’ পুনঃসংশোধনের আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সাত্তার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবীতে জ্বালানি প্রাপ্তিতে স্বল্পতা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্থানীয় বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এব সেই সাথে বেড়েছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।
তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে সরকারকে আরও কৌশলী হওয়া ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও উদ্যোগী হওয়া আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, সরকার গৃহীত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে এখনও গ্যাস-বিদ্যুৎ, পরিবহনসহ অন্যান্য সেবার শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে সকল সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের আলোচনায় সামিট পাওয়ারের পরিচালক ফয়সাল করিম বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানিতে একটি সুনির্দিষ্ট কর কাঠামোর অনুসরণের আহ্বান জানান।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান শিল্পখাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান এবং সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল’র চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, জ্বালানির দাম বিষয়ে আরও স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। জ্বালানির অনুমানযোগ্য মূল্যের বিষয়ে একটি দীর্ঘমেয়েদী পরিকল্পনা থাকা অপরিহার্য।
Posted ১২:২৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২১ মে ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy