নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট
বৈশ্বিক মন্দা কিংবা দেশে চলমান নানা সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। ব্যবসারের শ্লথ গতির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে দেশের রাজস্ব আহরণের ওপরও।
যার প্রমাণ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে জুলাই-সেপ্টেম্বরে আয়কর, মূসক বা ভ্যাট ও শুল্ক আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক (- ৬.০৭ শতাংশ)।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৯৬ হাজার ৪৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যার বিপরীতে রাজস্ব আদায় ৭০ হাজার ৯০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত তিন মাস ধরেই দেশে সবচেয়ে সংকট সময় অতিক্রম করছে। সরকার পরিবর্তনের পরও আবার ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় করা যায়নি। সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে বলে মনে করছি।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, তিন মাসের মধ্যে অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাসেই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি।
পরের মাস আগস্টেও একই অবস্থা দেখা গেছে। ওই মাসে ৩১ হাজার ৬০৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। ওই মাসে রাজস্ব আয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়।
সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৯ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ২ কোটি টাকা। এই মাসেও রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
তিন মাসে আয়কর খাতে ঘাটতি হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। এই খাতে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় হয়েছে ২৩ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ কোটি টাকা কম।
অন্যদিকে আমদানি খাতে তিন মাসে ২৮ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২২ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এই খাতে ঘাটতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে ভ্যাট বা মূসক আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। ভ্যাট আদায় হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। এ সময়ে এই খাতের লক্ষ্য ছিল ৩৪ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে মোট ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। যা জিডিপির ৯.৭ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। আর অন্যান্য উৎস থেকে ৬১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আয়কর, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর থেকে আসবে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, ভ্যাট থেকে ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৩ কোটি, সম্পূরক শুল্ক ৬৪ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, ৪৯ হাজার ৪৬৪ কোটি, রপ্তানি শুল্ক ৭০ কোটি, ৫ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও অন্যান্য কর থেকে আসবে ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।
Posted ১:০২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy