সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পলাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট

দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পলাতক

অর্থ আত্মসাৎ ও সব সম্পত্তি দখলের হীন উদ্দেশ্যে স্বামী হাসান আহমেদকে হত্যা মামলার চার্চশিটভুক্ত আসামি দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পলাতক আছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নানাভাবে তালাশ করেও তাকে খুঁজে পায়নি। হাসান আহমেদ ছিলেন পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান। ২০২২ সালে তাকে হত্যার অভিযোগ উঠে তার স্ত্রী জান্নাতুলের বিরুদ্ধে। এরপর রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় তাকে আসামী করা হয়। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।
জানা যায়, হাসান আহমেদের (৫৭) মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের নির্দেশে রাজধানীর পল্টন থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তার ছোট ভাই কবির আহমেদ বাদী হয়ে ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি এই মামলা করেন। মামলায় হাসান আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী, শাশুড়ি, শ্যালক ও শ্যালিকাসহ আটজনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, পপুলার লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ তার স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তার স্ত্রী তাকে সুচিকিৎসা না করিয়ে বাসায় ফেরত আনেন। তাকে দেশ কিংবা দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে হাসান আহমেদের মা, ভাই, বোন ও পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্সের পক্ষ থেকে বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে হাসান আহমেদের মা সন্তানের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা চেয়ে পল্টন মডেল থানায় গত ২০২০ সালের ৩ নভেম্বরে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন (নম্বর-১৯১)।

আরো জানা যায়, অভিযুক্ত পলাতক আসমি জান্নাতুল ফেরদৌস হাসান আহমেদকে সুচিকিৎসা করতে না দিয়ে ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া জোরপূর্বক বাসায় নিয়ে এসে সম্পত্তি ও অর্থ আত্মসাতের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। নির্যাতন সইতে না পেরে একপর্যায়ে গত ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি হাসান আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন। পরবতীর্তে হাসান আহমেদের ছোট ভাই কবির আহমেদ বিষয়টি বুঝতে পেরে তার ভাই হত্যার বিচারের আশায় পল্টন থানায় ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার নম্বর ১১৪/২০২২। স্বামী হত্যায় অভিযুক্ত স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস নিম্ন আদালতে হাজির হওয়া শর্তে গত ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। এরপর থেকে তিনি পলাতক আছেন। ইতোমধ্যে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে হাসান আহমেদকে হত্যায় জান্নাতুল, তার ভাই, বোন ও মাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সব আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বলে জানা যায়। বর্তমানে আসামিরা পলাতক রয়েছেন।

 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, হাসান আহমেদ বিবাহিত জীবনে সুখী ছিলেন না। বিয়ের শুরু থেকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাসান আহমেদের সম্পত্তি দখলের জন্য নানা ফন্দি করে আসছিলেন। নানা ছলে হাতিয়ে নেন গাড়ি, বাড়ি ও হাসান আহমেদের নামে থাকা প্রচুর পরিমাণ শেয়ারসহ নগদ অর্থ। পপুলার লাইফের ৪০ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৫৪টি শেয়ার স্ত্রীর নামে হস্তান্তরের জন্য ২০২১ সালের ৩ মে বাংলাদেশে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বরাবর আবেদন করতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু তা নিয়মসম্মত না হওয়ায় ওই বছরের ২৫ আগস্ট সমুদয় শেয়ার হস্তান্তরের অনুমতি প্রদান সম্ভব নয় বলে বিএসইসি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়। কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্রী নন জান্নাতুল ফেরদৌস। কিছু না কিছুতো আদায় করতেই হবে। তাই ১ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার স্ত্রীকে দেয়ার জন্য বিএসইসি বরাবর আবার আবেদন করেন হাসান আহমেদ। কিন্তু স্ত্রীর নামে শেয়ার হস্তান্তরের পুনঃআবেদন স্বতঃস্ফূর্ত নয়, বরং স্ত্রীর অনুচিত প্রভাবেই তা সংঘটিত বলে দাবি করেন হাসান আহমেদের ভাইয়েরা। স্ত্রীর কাছে শেয়ার হস্তান্তরের জন্য ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিবের কাছে হাসান আহমেদ প্রত্যয়নপত্র ও তার স্বাক্ষর যাচাইয়ের জন্য আবেদন করেন।

একই সঙ্গে সম্পত্তি কুক্ষিগত করার জন্য স্ত্রীর মানসিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হন হাসান আহমেদ। উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসান আহমেদের মা ও ভাইয়েরা বিদেশে নেয়ার চেষ্টা করলে বাধা হয়ে দাঁড়ান স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। হাসান আহমেদের মা ও ভাইদের সন্দেহ হয় যে, এই স্ত্রীর হাতে নিরাপদ নয় হাসান আহমেদের জীবন। তাই স্ত্রীর কবল থেকে হাসান আহমেদকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তাতে সফল না হওয়ায় পরে মামলাও করেন। কিন্তু হাসান আহমেদকে উদ্ধার সম্ভব হয়নি। শেষমেশ স্ত্রীর হেফাজতে হাসান আহমেদের মৃত্যু হলে মা-ভাইয়ের সন্দেহ আরো তীব্র হয়। তাই স্ত্রী ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
হাসান আহমেদের ভাইয়ের পরিবারের অভিযোগ, হাসান আহমেদের বায়তুল মোকারমের দোকান বিক্রি করে পাওয়া ৭ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংক থেকে ২ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংক থেকে ৩ কোটি টাকা, শাকিল রিজভী সিকিউরিটিজ থেকে শেয়ার বিক্রি করে প্রাপ্ত ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, অথচ টাকার অভাবে তার চিকিৎসা হয়নি।

হাসান আহমেদের চিকিৎসায় পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভূমিকা সম্পর্কে জানার জন্য কোম্পানীর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম ইউসুফ আলী ও কোম্পানী সচিব মোস্তফা হেলাল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা বলেন, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী হাসান আহমেদের উন্নত চিকিৎসায় যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। প্রতিষ্ঠানটি হাসান আহমেদের চিকিৎসার জন্য প্রথমে ১০ লক্ষ টাকা দেয়। পরে তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় বহনের সিদ্ধান্তও পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করে। পরিচালনা পর্ষদের এই সিদ্ধান্ত আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তার স্ত্রীকে অবহিত করি। আমরা ব্যক্তিগতভাবেও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করি কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

 

 

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৫১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com