সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাত দিনে রিজার্ভ কমল ১১৮ কোটি ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

সাত দিনে রিজার্ভ কমল ১১৮ কোটি ডলার

প্রায় দেড় বছর ধরে ডলার সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। সংকট মোকাবিলায় বাজারে প্রতিদিনই ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।

এ মাসের শুরুতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৬ কোটি মার্কিন ডলার। ব্যাংকগুলো বেশি দামে রেমিট্যান্স কেনায় মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর পেমেন্ট দেওয়ার পরও রিজার্ভ বেড়ে ২ হাজার ৭৮ কোটি ডলারে উঠেছিল। কিন্তু ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকায় রিজার্ভ আবারও কমতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১১৮ কোটি ডলার কমে রিজার্ভ এখন দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৬০ কোটি ৩৭ লাখ ডলারে।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে রিজার্ভের এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫২৬ কোটি (২৫ দশমিক ২৬ বিলিয়ন) ডলার। তবে আইএমএফের শর্ত ও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী বিপিএম-৬ ম্যাথডের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের সঙ্গে ৫.৬৬ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ এক হাজার ৯৬০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ১৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমকি ৭৩ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। মাত্র ৫ মাসে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ কমে গেছে।

বিশ্বজুড়ে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী, রিজার্ভ গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন তহবিলের পাশাপাশি বিমানকে দেওয়া ঋণ গ্যারান্টি, পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ঋণ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে আমানত এবং নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে থাকা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আগে এগুলোকেও রিজার্ভ হিসেবে দেখিয়ে আসছিল। এসব হিসাব বাদ দেওয়ার কারণে রিজার্ভ থেকে ৫ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার কমে যায়।

তবে বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের নেমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এখন যে পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে শুধু তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সংকটের কারণে রিজার্ভ থেকে বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া এ মাসে আকুর বিলও পরিশোধ হয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কম এসব কারণেই মূলত রিজার্ভ কমছে।

কীভাবে তৈরি হয় রিজার্ভ

রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যে ডলার পাওয়া যায় তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই রিজার্ভে যোগ হয়। আর বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি থাকায় আমদানি ব্যয় কমেনি। এছাড়া করোনার পর বৈশ্বিক বাণিজ্য আগের অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে; যা এখনো অব্যাহত আছে। এ সংকট দিন দিন বাড়ছে। বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৫২০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমছে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এ সূচকটি ধারাবাহিকতা কমছে।

দেশের বিভিন্ন খাতে শর্ত পূরণের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। এই শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে তা ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখার কথা ছিল। কিন্তু পরে এসব শর্ত শিথিল করেছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছায়। ওই বছরের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে। এরপর তা বেড়ে ক‌রোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট। ওইদিন রিজার্ভ ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা চার হাজার ৮০৪ কোটি ডলারে উঠে। এরপর ডলার সংকটে গত বছর থেকে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:১২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com