নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
আন্ধারমানিক নদীতে সেতু নির্মাণ, টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে স্বল্পদামে বিক্রির জন্য অভ্যন্তরীণ দরপত্রের মাধ্যমে ১ কোটি ৩০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাবসহ ১২ ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২০৪২ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
বুধবার (৪ অক্টোবর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
তিনি বলেন, আজকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১২টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ২টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১টি এবং টেবিলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাবনা ছিল। এতে মোট ব্যয় হবে ২০৪২ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৯১ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক ৮ম শ্রেণি, দাখিল ৮ম শ্রেণি ও কারিগরি ৮ম শ্রেণির বিনামূল্যেও পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সকল শিক্ষার্থীর কাছে তাদের কাঙ্ক্ষিত পাঠ্যপুস্তক যথাসময়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ইবতেদায়ি (২য় ও ৩য় শ্রেণি), মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) ৮ম শ্রেণি, দাখিল ৮ম শ্রেণি ও কারিগরি (ট্রেড বই) ৮ম শ্রেণির ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ১০৪৭টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ৯৭২টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক ৮৪টি লটে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা এবং ২৮টি লটে ২য় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই বই সংগ্রহ করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৯৮ কোটি ৩৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩ টাকা। প্রতি পাঠ্যপুস্তকের দাম পড়বে ৩৭.০৮ টাকা।
সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৫০ লাখ (+৫%) লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। ২ লিটার পেটজাত বোতলে প্রতি লিটার ১৫৮.৫৫ টাকা হিসেবে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ৭৯ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত পুনঃদরপত্র পদ্ধতিতে ৮০ লাখ (+৫%) লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি দামে সয়াবিন তেল বিক্রির লক্ষে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন ক্রয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ৩টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেঘনা এডিবল অয়েলস রিফাইনারি লিমিটেড ২ লিটার পেটজাত বোতলে এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। প্রতি লিটার ১৬১.৯৪ টাকা হিসেবে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার টাকা।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কোর থেকে ৭ম লটে ৪০ হাজার মে.টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে প্রতি মে. টন ডিএপি সার ৫৬৮.৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫১ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কোর থেকে ৮ম লটে ৪০ হাজার মে.টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে প্রতি মে. টন ডিএপি সার ৫৬৮.৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫১ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৯ম লটে ৩০ হাজার মে.টন টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি মে. টন টিএসপি সার ৩৯৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মে.টন টিএসপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ১৭ লাখ ৯০ হাজার মা. ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
সভায় ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সিগঞ্জ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন (অতিরিক্ত) মাটি ভরাটের পূর্ত কাজ ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এনডিই; (২) এনএনবিএল এবং (৩) এসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১০২ কোটি ৪০ লাখ ১৬ হাজার ৮৫৭ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, চট্টগ্রামের ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লি. এর জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) ফসফরিক এসিড আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই (স্থানীয় এজেন্ট: মেসার্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনপুট, ঢাকা) এই ফসফরিক এসিড সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রতি মে.টন ফসফরিক এসিডের দাম ৫৯৮ মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল অ্যানহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউকেয়ার) ফেস-১ প্রকল্পের প্যাকেজ-৬ এর পূর্ত কাজ ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। ৪টি দরপ্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড, ঢাকা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৪২ টাকা।
সভায় ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় ৮৯১ মিটার সেতু নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য এক ধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তার মধ্যে ৪টি প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১১০ কোটি টাকা।
অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, শেরপুর (কানাসাখোলা)-ভীমগঞ্জ-নারায়ণখোলা-রামভদ্রপুর-পরানগঞ্জ-ময়মনসিংহ (রহমতপুর) সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং পিডব্লিউ-০৪ এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড; (২) হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড এবং (৩) মাসুদ হাই-টেক ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৩৫৮ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও, সভার টেবিলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আন্ধারমানিক নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৯৪৩ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৯ টাকা।
Posted ৮:২৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy