নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
ওষুধ ও প্রসাধনীকে একই আইনের আওতায় না এনে বরং এই দুই শিল্পকে পৃথক আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন প্রসাধনী ব্যবসায়ীরা।
রোববার (১৬ এপ্রিল) দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত ঔষধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩ : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রসাধনী ব্যবসায়ীরা এই দাবি জানান।
সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রস্তাবিত ঔষধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩ এর ৩১-৩৫ ধারা অনুযায়ী কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি বা রপ্তানির জন্যে এবং এই কাজে নিয়োজিত কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকান মালিককে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে নিবন্ধন ও লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ একই বিষয়গুলো অনুসরণ করে বিএসটিআই আইন ২০১৮ এর অধীনে কসমেটিক্সের প্রয়োজনীয় সমস্ত লাইসেন্স প্রদান করে আসছে বিএসটিআই। একই বিষয়ে নতুন একটি রেগুলেটর শুধুমাত্র আরেকটি স্তর তৈরি করবে এবং ব্যবসা করার খরচ ও জটিলতা বাড়াবে।
সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয় এমন কোনো আইন করা হবে না। যখনেই কোনো আইন করা হয়, তা মানুষের মঙ্গলের জন্যই করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজই হচ্ছে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের সেবা দেওয়া ও তা নিশ্চিত করা।
আগামীতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রসাধনী শিল্পের অংশীজনদের নিয়ে একটি শুনানির আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ম্যান্ডেট হলো দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন বিষয়গুলোকে রোধ করা।
জাহিদ মালেক জানান, আইনটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, এই আইন পাসের আগে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে কসমেটিক্স সেক্টরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত নিশ্চিতের আহ্বান জানাচ্ছি। ব্যবসায়ীদের সাথে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে একটি শুনানি আয়োজনে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ওষুধ ও কসমেটিক দুটো পণ্যই সাধারণ ভোক্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তবে এ দুটি পণ্যের চাহিদা ও ব্যবহারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুটো শিল্পের জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। তবে উৎপাদন পর্যায় থেকে আমদানি পর্যন্ত এ দুটি পণ্যের ব্যবহারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায় একই আইনের আওতায় এনে ওষুধ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রসাধনী সামগ্রীর কার্যক্রম পরিচালিত হলে প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন।
সাধারণত যেকোনো আইন প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও উল্লেখিত আইনটি তৈরির ক্ষেত্রে কসমেটিক্স ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করা হয়নি। আইনটি বাস্তবায়নের পূর্বে এর প্রায়োগিক সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করে এফবিসিসিআই এই সেমিনার আয়োজন করেছে, বলেন তিনি।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ড্রাগ আইনটি বেশ ভালো। পূর্বে অ্যান্টিবায়োটিক সবাই যে যার মত ব্যবহার করতে পারলেও নতুন আইনের মাধ্যমে তা পারবে না। এ সময় ক্ষুদ্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, দেশ, দেশের প্রতিষ্ঠান ও জনগণকে বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার জন্য সবরকম সহযোগিতা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হতে পারবে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিএসটিআই হতে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. নুরনবী। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার, বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন সরকার, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ডিএমডি ও সিইও মো. হালিমুজ্জামান, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. এম. এ মুবিন খান, মিল্লাত কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের এমডি মেহফুজ জামান।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, হাবিব উল্লাহ ডন, ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, এফবিসিসিআই পরিচালকবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতারাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy