নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও স্টক এক্সচেঞ্জে দুই ধরনের আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কোম্পানির দুই ধরনের আর্থিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্যে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে মোট বিক্রয়, কস্ট অব গুড সোল্ড, নিট আয়সহ অনান্য উপাদান গড়মিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর বছরে আয়কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে এবং প্রকৃত তথ্য গোপন করা হয়েছে। তাই, কোম্পানির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর।
সম্প্রতি এ বিষয়ে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসিকে দেওয়া চিঠিতে এনবিআর উল্লেখ করেছে, উল্লিখিত করদাতা কোম্পানি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই-সিএসই) নিবন্ধিত। কোম্পানিটির বিষয়ে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য এবং করদাতা কোম্পানির আয়কর নথির প্রাথমিক পর্যালোচনা করেছে। সেই পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, আয়কর বিভাগ ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ২০১৪-২০১৫ ও ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের জন্য দাখিল করা একই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে হিসাবের বিভিন্ন তথ্যে ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। এতে একই সময়ের জন্য দাখিলকৃত প্রতিবেদনে দুই কর্তৃপক্ষের জন্য দুই ধরনের আয় প্রদর্শন করেছে। এছাড়া, মোট বিক্রয়, কস্ট অব গুড সোল্ড, নিট আয়সহ অনান্য উপাদানে গড়মিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর বছরের আয়কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এ অবস্থায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত কোম্পানি জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (টিআইএন নম্বর- ৪৯৭০৭১১৯৩৫৪৯) ২০১৪-২০১৫ এবং ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের দাখিলকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আয়ের প্রকৃত তথ্য গোপনের বিষয়টি অবগতি ও যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির সচিব লিয়াকত আলী বখতিয়ার বলেন, আমরা সব জায়গায় একই আর্থিক প্রতিবেদন দিয়ে থাকি। কিন্তু, দুই ধরনের তথ্য দেওয়ার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে এখনো আমাদেরকে সংশ্লিষ্ট জায়গা থেকে কিছু জানানো হয়নি। তাই, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, প্রথমে নিরীক্ষকের কাছ থেকে নিশ্চিত করতে হবে, কোন প্রতিবেদনটি সঠিক। সেক্ষেত্রে যদি দুটো প্রতিবেদনই তৈরি করে থাকে, সেক্ষেত্রে নিরীক্ষকও শস্তির আওতায় আসবে। যদি একটি নিরীক্ষক তৈরি করে আর অপরটি কোম্পানি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে, তাহলে শুধু কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকবে। এজন্য প্রথমে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন নিশ্চিত করে পরবর্তীতে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ তালিকাভুক্ত হয় ২০১১ সালে। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৮১ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮ কোটি ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৯টি। ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৩৬.৯৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১.৭৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৪১.২৮ শতাংশ শেয়ার আছে।
২০১৯ থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত টানা তিন বছর সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ দেয়নি জাহিন স্পিনিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের জানুয়ারিতে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পরিচালনা পর্ষদে তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ পাওয়া স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন—মেজর আব্দুল কুদ্দুস মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেরিনা বানু এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নাজমুল হাসান। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩.১১ টাকা। রোববার (১৬ এপ্রিল) ডিএসইতে জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার সর্বশেষ ৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
Posted ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy