নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছে। শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি কাজ করছে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী। কিন্তু আগুন লাগার কারণ হিসেবে ফায়ার সার্ভিস আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দেয়নি।
তবে নিউ সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লোক রাত ৩টার দিকে ব্রিজ ভাঙার কাজ করছিল। ব্রিজের ওখানে মার্কেটের কারেন্টের লাইন ছিল। ওই লাইনের উপর বুল্ডোজার চালানোর সময় তারা সেটা খেয়াল করেনি। ফলে ওই ছেড়া তার থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লোকরা কোনো পরিকল্পনা না করে এই ব্রিজ ভাঙার কারণে আজ ব্যবসায়ীদের এই করুন দশা হয়েছে। পুরো মার্কেট পুড়ে ছাই হয়েছে। কোটিপতি ব্যবসায়ীরা আজ সব হারিয়ে পথের ফকির হয়েছেন।
তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া) শাহজাহান সিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ সুপার মার্কেটে এ আগুন লাগে এবং ৫টা ৪৩ মিনিটে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে ইউনিট সংখ্যা বাড়িয়ে ১৯টি এবং সর্বশেষ ৩০টি করা হয়েছে।
নিউ সুপার মার্কেটে আগুন নিয়ে ডিএসসিসির বক্তব্য:
এদিকে রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুন লাগার সঙ্গে পথচারী পারাপার সেতুর (ফুটওভার ব্রিজ) সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে করপোরেশন থেকে নেওয়া উদ্যোগকে সম্পর্কিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে মনে করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। শনিবার (১৫ এপ্রিল) ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মমর্তা মো.আবু নাছের স্বাক্ষরতি এক বিবৃতিতে এমনটাই জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছেম আগান লাগাকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যক্তি, স্বার্থান্বেষী মহল নিউ মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত পথচারী পারাপার সেতুর (ফুটওভার ব্রিজ) সংযোগ বিচ্ছিন্ন করণে করপোরেশন কর্তৃক গৃহিত উদ্যোগকে সম্পর্কিত করার অপচেষ্টা করছেন। ফলশ্রুতিতে, গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও অনাকাঙ্খিক্ষত সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, যা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। নিউমার্কেটে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ভিত্তিহীন সংবাদ ও গুজব প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা নিউ মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত পথচারী পারাপার সেতুটি (ফুটওভার ব্রিজ) গতবছরই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তখন সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ফলক ঝুলিয়ে দেওয়া এবং সেতুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে লোকজন চলাচল করছিল, যা অত্যন্ত অনিরাপদ। এ অবস্থায় দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গত ১২ এপ্রিল সেই সেতুটির সঙ্গে মার্কেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গতশুক্রবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ভোর ৫টা ১৫ সিনিট পর্যন্ত সেতুর সঙ্গে মার্কেটের ২য় তলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং করপোরেশন আজকের মতো কার্যক্রম শেষ করে।
আর ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। সুতরাং অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের সময় থেকে আধা ঘণ্টারও বেশি আগে শেষ হয় সেতুর সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ কার্যক্রম। ফলে আগুনের সঙ্গে দৃশ্যত ও অদৃশ্য কোনও ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেতু অপসারণের সঙ্গে আগুন লাগাকে একসূত্রে গাঁথার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। এই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে করপোরেশন কর্তৃক সেতু বিচ্ছিন্নকরণের ন্যূনতম কোনও সংযোগ নেই। কারণ সেতু বিচ্ছিন্নকরণ স্থান হতে ৪০০ ফুটেরও অধিক দূরত্বে আগুন লেগেছে। সেতু বিচ্ছিন্নকরণে করপোরেশন কোনও গ্যাস কাটার ব্যবহার করেনি। হুইল এস্কাভেটর ব্যবহার করে সেতু বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। আর বিচ্ছিন্নকরণ স্থানে করপোরেশনের কর্মকর্তা, ডিপিডিসির কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। যাতে করে নিরাপদে এই কার্যক্রমটি সম্পন্ন করা যায়। এছাড়াও সেতুর সঙ্গে মার্কেটের সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের আগে থেকেই সেতুর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।
অগ্নিকাণ্ডসহ যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা কারও কাম্য নয়। তথাপি, এ ধরনের দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কমানো ও জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা সর্বাত্মক অগ্রাধিকার। সেলক্ষ্য ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ সেনাবাহিনী, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। সুতরাং, দুর্যোগের এই কঠিনতম সময়ে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভিত্তিহীন সংবাদ ও গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে সবাই এগিয়ে আসি। তাহলেই গণমাধ্যম আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মনে করে।
Posted ৪:৫৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy