নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ৬৬ বছর বয়সে তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালে এইদিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১৯১৮ সালের পয়েলা সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এম এ ওসমানী। পিতার চাকরির সুবাদে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়। ১৯৩৪ সালে তিনি অসাধারণ নম্বর পেয়ে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করে অসাধারণ ফলাফলের জন্য প্রিটোরিয়া পুরস্কার লাভ করেন। তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএ ও বিএ পাস করে এম এ ১ম পর্ব শেষ করেন। ইতোমধ্যে তিনি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। কমিশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে যোগ না দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১৯৩৯ সালে জুলাই মাসে ওসমানী বৃটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪০ সালে ৫ অক্টোবর তিনি ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি দেরাদুন থেকে সামরিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে কমিশন প্রাপ্ত হন।
এরপর দ্রæত পদোন্নতি লাভ করে ১৯৪১ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে ক্যাপ্টেন এবং ১৯৪২ সালের ফেব্রæয়ারিতে তৎকালীন বৃটিশ সাম্রাজের সর্বকনিষ্ঠ মেজর হন। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ওসমানী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে লং কোর্স পরীক্ষা দিয়ে উচ্চস্থান লাভ করেন। দেশবিভাগের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এসময় তার পদমর্যাদা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেন। পাক-ভারত যুদ্ধ যখন শেষ হয় তখন তার বয়স চল্লিশের উপরে। ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৭০ সালের জুলাই মাসে চির কুমার এম এ জি ওসামানি রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ থানার সমন্বয়ে গঠিত পাকিস্তানের বৃহত্তম নির্বাচনী এলাকা থেকে তার নিকট চারজন প্রতিদ্ব›দ্বীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জাতীয় পরিষদে জয়লাভ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জাতির সঙ্কটময় মুহূর্তে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন এবং শত্রুর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার স্বার্থে একটি সেনাবাহিনী, একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলেন।
জাতির প্রতি তার চরম ত্যাগ ও সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্নেল ওসমানী পি এম সি কে জেনারেল পদে উন্নীত করেন। ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল হতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পদ বিলুপ্ত হওয়ায় তিনি সামরিক বাহিনী থেকে ছুটি নেন এবং বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হিসেবে পরিষদের আসন গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর তিনি ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি মাত্র ৬৬ বৎসর বয়সে লন্ডন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার সুবিশাল কর্মময়জীবন ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ওসমানী উদ্যান’ ‘ওসমানী মেমোরিয়াল হল’, সিলেট এম, এ, জি ওসমানী হাসপাতাল, ‘ওসমানী জাদুঘর এবং ওসমানী বিমানবন্দর তার নামে নামকরণ করা হয়।
Posted ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy