বুধবার ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজি

৫৩ কোটি টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫ | প্রিন্ট

৫৩ কোটি টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার দায়ে বিনিয়োগকারী শাহাদাত হোসেন ও তার ১৪ সহযোগীকে ৫৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কারসাজিতে জড়িতরা ২০টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে লেনদেন করেছেন। সম্প্রতি বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা একাধিক বিও হিসাব খুলে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে। পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল শাহাদত ও তার সহযোগীরা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে বিএসইসি।

গত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

 

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজির দায়ে সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এর ক্ষমতাবলে আজাদ গাজীকে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, জামাল হোসেনকে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, মো. আবু ইউসুফকে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, মো. ইমাম হোসেনকে ১ লাখ টাকা, মো. জসিম মিজিকে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, মো. খোকন মিয়াকে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা, মো. মাহফুজুর রহমানকে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, মো. সেলিমকে ১ লাখ টাকা, মো. সিরাজুল ইসলামকে ৪৩ লাখ টাকা, মো. মোহর আলীকে ৬৩ লাখ টাকা, মো. রহিম বাদশাকে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পারভেজ হোসেনকে ৫ কোটি টাকা, শাখাওয়াত হোসেনকে ১ লাখ টাকা, সাহাবুল আহমেদকে ১ লাখ টাকা এবং শাহাদাত হোসেনকে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে আলোচ্য আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের মোট ৫৩ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।

এছাড়া কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করার দায়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) এর ক্ষমতাবলে আজাদ গাজীকে ১ লাখ টাকা, জামাল হোসেনকে ১ লাখ টাকা, মো. আবু ইউসুফকে ১ লাখ টাকা, মো. ইমাম হোসেনকে ১ লাখ টাকা, মো. জসিম মিজিকে ১ লাখ টাকা, মো. খোকন মিয়াকে ১ লাখ টাকা, মো. মাহফুজুর রহমানকে ১ লাখ টাকা, মো. সেলিমকে ১ লাখ টাকা, মো. সিরাজুল ইসলামকে ১ লাখ টাকা, মো. মোহর আলীকে ১ লাখ টাকা, মো. রহিম বাদশাকে ১ লাখ টাকা, পারভেজ হোসেনকে ১ লাখ টাকা, শাখাওয়াত হোসেনকে ১ লাখ টাকা, সাহাবুল আহমেদকে ১ লাখ টাকা এবং শাহাদাত হোসেনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে আলোচ্য আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের মোট ১৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।

ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজি করে শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে আজাদ গাজী, জামাল হোসেন, মো. আবু ইউসুফ, মো. ইমাম হোসেন, মো. জসিম মিজি, মো. খোকন মিয়া, মো. মাহফুজুর রহমান, মো. সেলিম, মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. মোহর আলী, মো. রহিম বাদশা, পারভেজ হোসেন, শাখাওয়াত হোসেন ও সাহাবুল আহমেদ বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ কাজে নেতৃত্ব দেন শাহাদাত হোসেন নিজেই। শাহাদাত হোসেনকে সহযোগিতাকারী সবাই শেয়ার ব্যবসায়ী।

শাহাদাত হোসেন ও তার সহযোগীরা যোগসাজেস করে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন করেন। কারসাজিকারীরা ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটি শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ২৯০.৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০২.৫০ টাকায় নিয়ে যাওয়া যায়। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৪১১.৮০ টাকা বা ১৪১.৬৬ শতাংশ বেড়ে যায়।

পরে শাহাদাত হোসেন ও তার সহযোগীরা ২০টি বিও হিসাব থেকে ওরিয়ন ইনফিউশনের বিপুল সংখ্যক শেয়ার লেনদেন করেন। এ কর্মকান্ডের মাধ্যেমে তারা একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিদনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। যার ফলে শেয়ারটির বাজার মূল্য অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটা সুস্পষ্ট সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) লঙ্ঘন হয়েছে। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী তা দন্ডনীয় অপরাধ।

এদিকে, শাহাদাত হোসেন ও তার সহযোগীরা উল্লিখিত সময়ের মধ্যে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন করে বিভিন্ন তারিখে সম্মিলিতভাবে কোম্পানির ১০ শতাংশ বা তার অধিক পরিমাণ শেয়ার ধারণ করেছেন। এর মাধ্যমে সুস্পষ্ট তারা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(১) লঙ্ঘন করেছেন। যেটা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর সেকশন ১৮ অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:৫৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com