নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, জ্বালানির জন্য আজকের এই মানবসভ্যতা, আবার জ্বালানির জন্যই সারাবিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহ অবস্থা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনার্জি কর্তৃক ‘সাসটেইনেবল এনার্জি উইক-২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল এনার্জি পলিসি এন্ড আওয়ার লাইভলিহুড’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এ কথা বলেন।
ইনস্টিটিউট অব এনার্জি’র পরিচালক ড. এম এস নাসিফ শামসের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের কার্যকরি সদস্য আদেলুর রহমান এমপি, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম ও বিইপিআরসি’র সদস্য রতন কুমার ঘোষ প্রমুখ আগামীর জ্বালানি নিরাপত্তা ও বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “মানব সভ্যতার অভ্যদ্বয়ের জন্য, উত্থানের জন্য জ্বালানি ব্যবহৃত হয়। আবার এই সভ্যতাকে ধ্বংস করার জন্য জ্বালানি একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। ভেনেজুয়েলা, নাইজেরিয়া জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভরপুর। কিন্তু বর্তমানে ভেনেজুয়েলা, নাইজেরিয়া অনেকটাই দেউলিয়া রাষ্ট্র। আবার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলো এই জ্বালানের ওপরে দাঁড়িয়ে আজকে উন্নত রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত সারাবিশ্বে জ্বালানির মূল্য বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। সুতরাং জ্বালানির জন্যই মানব সভ্যতা আজকের এই পর্যায়ে এসেছে। আবার এই জ্বালানির জন্যই সারাবিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহ অবস্থা বিরাজ করছে।”
বায়ু দূষণের জন্য মানসম্মত নয় এ ধরনের জ্বালানি ব্যবহারকে সবচেয়ে বেশি দায়ী উল্লেখ করে মেয়র শেখ তাপস বলেন, “ধুলার জালা সহ্য করা যায় না। কিন্তু লেড, ম্যাগনেসিয়ামসহ বিভিন্ন ধরনের যে বিষাক্ত পদার্থ আমরা প্রতিনিয়ত নিচ্ছি, সেটা কেউ খেয়াল করছে না। বাংলাদেশে যে জ্বালানি তেল আসে সেটা নিম্নমানের। যে ডিজেল আমরা ব্যবহার করি, তা কতটা বিপজ্জনক — প্রতিদিন বায়ু দূষণের মাত্রায় সর্বোচ্চ ওপরে থাকার পরেও আমাদের উপলব্ধি আসছে না। উপলব্ধিতে আসছে শুধু ধুলা-বালি। এই ধুলা-বালি আমাদেরকে বিরক্ত করছে। কিন্তু বায়ু দূষণের ৮০ ভাগ কারণ হলো জীবাশ্ম জ্বালানি। আমরা যে তেলটা ব্যবহার করি সেটা অপরিশোধিত তেল। যেখানে লেড, ম্যাগনেসিয়াম, সালফারের মতো অনেক বিপদজ্জনক পদার্থ পাওয়া যায়। যার কারণে ঢাকা শহর ছোট শহর হওয়ার পরেও আমরা এখানে বায়ু দূষণের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছি। মানসম্মত নয় এমন জীবাশ্ম জ্বালানি বেশি ব্যবহারের কারণে আজকে আমরা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ু দূষণগ্রস্থ শহরে পরিণত হয়েছি।”
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী উদ্যোগ তুলে ধরে মেয়র শেখ তাপস বলেন, “জ্বালানি — আমার সম্পদ, আমারই থাকবে। জাতির পিতা সেটা সর্বপ্রথম নির্ধারণ করেছিলেন। পাকিস্তান আমলে আমাদের বড় বড় গ্যাস ক্ষেত্রগুলো বহুজাতিক কোম্পানিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে তিতাস গ্যাসসহ ৫টি বড় বড় গ্যাস ক্ষেত্র বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন। সে সময় আমাদের অর্থ ছিল না কিন্তু তিনি ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা উপলব্ধি করেই সেগুলো কিনে নিয়েছিলেন। যে কারণে আজ অবধি আমরা গ্যাস ব্যবহার করতে পারছি।”
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নানামুখী উদ্যোগ উল্লেখ করে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন,“জ্বালানির মূল কার্যক্রমই হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা। সৌর, পানি, বায়ু, পারমানবিক, কয়লা — যে ধরনের জ্বালানিই হোক না কেন, এগুলোর সবই বৃহদার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। সে বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়, দেশকে উন্নত করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটাই করেছেন। তিনি সব ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করে বাংলাদেশকে আজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। বিগত ১৪ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৮০০ মেগাওয়াট থেকে তিনি ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছেন।”
সেমিনারে বক্তারা ২০০৮ সালে প্রণীত সাসটেইনেবল এনার্জি পলিসির আলোকে আগামীর জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। উল্লেখ যে, ঢাকার প্রায় ১৫০টি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে সাসটেইনেবল এনার্জি উইক-২০২৩। আজকের সমাপনী সেমিনারের মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী এ আয়োজনের সমাপ্তি হলো।
Posted ১:০২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy