নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
সবুজ চা বাগানের গালিচা বেছানো চারপাশে। ঘন কুয়াশায় ঘেরা পথ। বিশাল হাওরের বুকে জেগে উঠছে সূর্য। এর মাঝেই পাহাড় আর টিলার ভাজে ভাজে কুয়াশার হাতছানি। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলার বর্তমান চিত্র। কুয়াশার চাদরে ঢাকা এই অমিত সম্ভাবনার ভূমি অপেক্ষা করছে অতিথি-পর্যটকদের জন্য।
মৌলভীবাজারে শুধু চা বাগানই নয়, আরও জনপ্রিয় কিছু স্থান এই শীত মৌসুমেই ঘুরে দেখার সময়।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় পাথারিয়া পাহাড় অঞ্চল অবস্থিত। এই পাহাড়েই রয়েছে মনোমুগ্ধকর মাধবকুন্ড জলপ্রপাত। প্রায় ২০০ ফুট ওপর থেকে আছড়ে পড়া জলের স্রোত। এছাড়া এই পাহাড়ের বুক জুড়ে রয়েছে আরও অসংখ্য ছোট ছোট ঝর্ণা। যেগুলোর মধ্যে সন্ধ্যানী, মায়াবন, মায়াকানন অন্যতম। যেই দুর্গম ঝর্ণাগুলোতে বর্ষার মৌসুমে যাওয়াটা বেশ দুষ্কর। এই শীতই জায়গাটি ঘুরে দেখার উত্তম সময়। বড় বড় পাথর, ক্ষীণ জলস্রোত আর প্রশান্তিদায়ক সবুজে ঘেরা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে প্রায় সারাবছরই থাকে পর্যটকদের আনাগোনা। মৌলভীবাজার হতে বড়লেখাগামী গাড়ি করে বড়লেখা পৌঁছার আগে কাঠালতলী নামক বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ও পাথারিয়া বনভূমি অবস্থান।
দূরদেশগুলোতে যখন শীতের কারণে বরফ বাতাসে উঠছে। তখন পাখিগুলো কোথায় আশ্রয় নেয়? পাখিগুলো ডানা জাপটে উড়ে আসে বাইক্কা বিলে। একাধারে পাখি, মাছ ও গাছগাছালির অভয়ারণ্য বাইক্কা বিল মূলত হাইল হাওরের অন্তর্ভুক্ত একটি অংশ। অগভীর এই হ্রদটিতে বিভিন্ন গাছপালার দেখা মেলে। সেই সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় জলাভূমিও। বিলের ঘেরাটোপে প্রবেশ করতেই পাখিদের মন মাতানো কলকাকলিতে মন ভরে উঠবে। যেহেতু বাইক্কা বিলে মাছ ধরা নিষেধ, বিলে থাকা মাছের ঝাঁক প্রতি বছরই পাখিদের আকর্ষণ করে। শীতকালে এখানে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় করে। তাই প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অন্যতম পছন্দের জায়গা এই বিল। পাখি দেখতে আসেন অনেকে, বিজ্ঞানীদেরও দেখা যায় দূরবীন নিয়ে বসে পড়তে। বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় এখানে নৌভ্রমণের অনুমতি দেওয়া থাকে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌর শহর থেকে মৌলভীবাজার আসার মাঝ পথে বরুনা নামক এলাকায় আসলে পশ্চিম দিকে বাইক্কা বিল যাওয়ার সড়ক।
শীতকালেই ফুটে ওঠে মাধবপুর লেকের মোহনীয় চেহারা। এ সময়ে সাদা পেটের বগলা পাখিও দেখা যায় এই লেইকে। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই লেকটি। জলপদ্মসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ এই স্থানটিতে বহু ধরনের পাখিদেরও আনাগোনা রয়েছে। একেক ঋতুতে মাধবপুর লেকের যেন একেক রূপ। কারও চোখে হয়তোবা তা ধরা দিতে পারে জল-উপকথার বিচিত্র প্রাণীর আকৃতিতে।
দেশের অবশিষ্ট চিরহরিৎ বন এটি। প্রায় সারা বছরই এখানে পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে। বিরল প্রজাতির পাখি, বাঁদর, হরিণ প্রভৃতি প্রাণীদের বাসস্থান এই উদ্যান। এদেরকে এক নজর দেখার পাশাপাশি হাইকিং ও ট্রেকিংয়ের জন্যও এ বন বেশ উপযোগী। তবে সেসময় স্থানীয় একজন গাইড সঙ্গে রাখলে ভালো হয়। বিশেষ করে শীতে শিশিরের অন্য এক জাদু ছড়িয়ে পড়ে এই রেইন ফরেস্টে। হালকা কাদামাখা পথ দিয়ে একা একা হেঁটে যেতেও মন ছুঁয়ে যাবে প্রশান্তি। প্রকৃতি ধরা দেবে চোখের সীমানায়। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান মৌলভীবাজার শহর থেকে মাত্র প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
বাঁশের সঙ্গে ছনের ঘর। কনকনে শীত অবহাওয়া। চারপাশে সবুজ গাছ আর পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। মৌলভীবাজার অসংখ্য ইকো রিসোর্টগুলোকে এভাবেই সাজানো হয়েছে। প্রাকৃতিক বিভিন্ন স্থানগুলোর পাশাপাশি পর্যটকদের মন কেড়ে নেয় বিভিন্ন পাঁচ তারকা ও ইকো রিসোর্টগুলো। সুলভ মূল্য থেকে শুরু করে বিলাসবহুল সব রিসোর্ট গড়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গলের আশেপাশে। যার মধ্যে রয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, লেমন গার্ডেন, বালিশিরা রিসোর্ট, নভেম ইকো রিসোর্টে, ওয়াটারলিলি, টি হ্যাভেন ও টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ অন্যতম। এছাড়া মৌলভীবাজার জেলা শহরের পাশেই রয়েছে দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, মুক্তানগর রিসোর্ট ও রাঙাউটি রিসোর্ট। তবে এসব রিসোর্টগুলোতে যেতে হলে আগে থেকে তাদের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে শর্ত সাপেক্ষে ঘুরে দেখা যায়। চাইলে বুকিং দিয়ে কয়েকদিন থাকাও যেতে পারে।
Posted ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy